একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর সাধারণত: ৬-১২ মাস মানুষের শরীরে সুপ্ত কোনো রোগ আছে কি না তার পরীক্ষা করার নামই হেলথ স্ক্রিনিং, যাকে আমরা সহজ ভাষায় রুটিন চেকাপ বলে থাকি। বহিঃবিশ্বের মতো আমাদের দেশে হেলথ ইন্সুরেন্স-এর প্রচলন অতটা না থাকায় কোনো সমস্যা দেখা না দিলে কেউ নিজের টাকা খরচ করে ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। তবে শরীরটা যেহেতু যার যার নিজের, তার টাকার চিন্তা না করে সকলেরই বিশেষ করে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর অবশ্যই হেলথ স্ক্রিনিং করিয়ে নেয়া অতীব জরুরি। অর্থাৎ, হেলথ স্ক্রিনিং সবার জন্য প্রযোজ্য। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক বিশেষ করে যাদের বয়স ৪০ বছর বা তার বেশি তাদের জন্য হেল্থ স্ক্রিনিং অত্যন্ত জরুরি। হেল্থ স্ক্রিনিং-এর মূল বিষয় হচ্ছে যে সমস্ত রোগের প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ থাকে না সেগুলোকে শনাক্ত করা। যেমন-ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্ত চাপ, কিডনীর সমস্যা, হার্টের সমস্যা, রক্তের চর্বির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, রক্ত শূন্যতা, প্রসাবে ইনফেকশন, শরীরে যে কোনো জায়গায় ইনফেকশন, পেটের ভিতরে (পিত্তথলি, কিডনি ও মূত্রথলি) পাথর হওয়া, জরায়ুর সমস্যা ইত্যাদি রোগসমূহ হেলথ স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে অনেক প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা যায়। হেলথ স্ক্রিনিং-এ সাধারণত: সিবিসি, ফাস্টিং ব্লাড সুগার, সেরাম ক্রিয়েটিনিন, ইউরিন আরএমই, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, লিপিড প্রোফাইল করতে দেয়া হয়। এসব টেস্টের মাধ্যমে কোনো রোগের প্রাথমিক অবস্থা অথবা কারো কোনো পূর্বের অসুখ থাকলেও তার অবস্থা জানা যায়। তাই প্রতিটি সচেতন মানুষের উচিত নিয়মিত হেলথ স্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে নিজের শরীরের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকা এবং সুস্থ সবল জীবন যাপন করা। হেলথ স্ক্রিনিং করতে আপনার পছন্দমতো মানসম্পন্ন কোনো হাসপাতালে বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েই আপনি হেলথ স্ক্রিনিং করতে চান বললেই চলবে। কিছু কিছু হাসপাতালে হেলথ স্ক্রিনিংয়ের বিশেষ প্যাকেজ অফার থাকে নারী পুরুষভেদে, আপনি চাইলে সেই প্যাকেজগুলোও নিতে পারেন। কিছু হাসপাতালে মেম্বারশিপ অফারের মাধ্যমে হেলথ স্ক্রিনিং করালে বিশেষ ছাড়ও পেতে পারেন। প্রয়োজনে কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে, তার রেফারেন্স দিয়ে তার সরবরাহকৃত প্রেস্ক্রিবশন দেখিয়েও আপনি আপনার প্রয়োজনীয় হেলথ স্ক্রিনিং করাতে পারেন। ছয়মাসে হেলথ স্ক্রিনিং করানো আমাদের মধ্যবিত্তদের কাছে বিলাসিতা মনে হলেও, বছরান্তে একবার হেলথ স্ক্রিনিং করানো অত্যাবশ্যক।